আজ ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেলে করোনার ব্যবসা!

ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের পর এবার করোনা নমুনা শনাক্ত পরীক্ষায় কেলেঙ্কারি আর প্রতারণায় জড়িয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ। বেসরকারি এই হাসপাতালটিতে এখন নেগেটিভ, পজিটিভ ব্যবসা রমরমা।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে অনুমোদনহীন মেডিকেয়ার ক্লিনিককে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে সারা দেশে আলোচনায় আসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজটি। এখন প্রতিদিন বের হয়ে আসছে, করোনা পরীক্ষা নামে হাসপাতালটিতে নেগেটিভ, পজিটিভ করার রমরমা ব্যবসা আর প্রতারণার নানা খবর। যদিও তা অস্বীকার করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে ইটালি গিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সিরাজ মিয়া। বিমানবন্দর থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। সিরাজ মিয়া এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ঢাকার হাজী ক্যাম্পে। তার করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত।

পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষা করিয়ে ছিলেন।

সিরাজ মিয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ জুন করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন তিনি। পরদিন দুপুরে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ হাতে পান। ৭ জুলাই একটি ফ্লাইটে ইটালি যান। পরদিন সেখানকার মিলান বিমানবন্দরে পৌঁছার পর তাদের আলাদা করে ফেলা হয়। এক ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

জেলা যুব মহিলা লীগের নেত্রী মুক্তি খান ছেলে প্রদ্যোতের করোনা পরীক্ষা নিয়েও কারিশমা দেখিয়েছে এই মেডিকেল কলেজ। একদিনের ব্যবধানে তার ছেলের পজিটিভ রিপোর্ট হয়ে গেল নেগেটিভ। এতে নিজেও হতবাক হয়েছেন মুক্তি খান।

তিনি বলেন, আমার ছেলে করোনার সব লক্ষণ ছিল। এর পরও কিভাবে পজিটিভ রিপোর্টকে নেগেটিভ বানিয়ে ফেলল তা আমার বোধগম্য হয়নি।

তিনি আরও জানান, ২৪ জুন তার ছেলের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়ে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরদিন সকাল ১০টায় ল্যাব থেকে তার ছেলেকে ফোন দিয়ে বলা হয় আপনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এতে আমরা খুব খুশি। এরপর ২৬ তারিখ দুপুর ২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমার ছেলের নম্বরে ফোন দিয়ে বলা হয় তার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।

আখাউড়া উপজেলার ছতুরা শরীফ এলাকার ৫ সদস্যের ইউরোপ প্রবাসী একটি পরিবার চলতি মাসে করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের নিকট আত্মীয় জানান,পরদিন ৫ জনের মধ্যে ওই প্রবাসী ও তার স্ত্রীর ফলাফল নেগেটিভ আসে। তাদের তিন সন্তানের আসে পজিটিভ। যোগাযোগ করলে দুপুরেই ৩ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়া হয়। তবে এবার তাদের নমুনা দিতে হয়নি।

আশুগঞ্জে দক্ষিণ তারুয়া গ্রামে বিল্লাল ভূঁইয়ার অভিযোগ, তার পিতাকে ভুয়া করোনা রিপোর্ট দেয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। বয়স ৭০ বলে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে দেয় ইচ্ছামতো। আসলে তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। এ রিপোর্ট পেয়ে তাদের পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পরে।

অভিযোগের ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

তিনি আরও বলেন, এ জাতীয় কোনো অভিযোগ কারো কাছ থেকে তিনি পাননি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, এ বিষয়টি অফিসিয়ালভাবে আমাদের কেউ জানায়নি। তার পরও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর..

ফেসবুকে আমরা

Facebook Pagelike Widget