আজ ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

সারি সারি চিতা জ্বলছে দিনরাত

ভারতের দিল্লির বাসিন্দা নীতিশ কুমার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মায়ের লাশ দুই দিন ধরে বাড়িতেই রেখে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। কারণ, দাহ করার জন্য শ্মশানে এক টুকরো জায়গা পাচ্ছিলেন না। দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়েছে শ্মশান ও কবরস্থানগুলোর ওপর। আর সেই কারণেই ঝুঁকির পরও মায়ের লাশটি বাড়িতে রেখে দেন নীতিশ কুমার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার উত্তর–পূর্ব দিল্লির সীমাপুরীর একটি শ্মশানের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা শ্মশানে নীতিশ কুমারের মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মূল শ্মশানে জায়গা না পেয়ে কুমারের মতো অনেকেই এ অস্থায়ী শ্মশানে গণহারে দাহ করছেন নিজের প্রিয়জনদের।

শ্মশানে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাহ করার করুণ চিত্র উঠে এসেছে রয়টার্সের একটি ছবিতে। এতে দেখা যায়, দিল্লির একটি শ্মশানে সারি সারি চিতা জ্বলছে। ড্রোন থেকে তোলা মহামারিকালের এমনই ছবি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। গত বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এমন মৃত্যুর মিছিলের দৃশ্য ধরা পড়েছিল নিউইয়র্কে। জায়গা কম পড়ায় থরে থরে কফিন সাজিয়ে ঠিক এভাবেই মৃতদেহ গণকবর দেওয়া হয়েছিল।

মায়ের মৃত্যু ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এনডিটিভিকে নীতিশ কুমার বলেন, ‘কোথায় না গিয়েছি। কিন্তু কিছু না কিছু কারণে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। চিতা জ্বালানোর জন্য কাঠ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও শুনতে হয়েছে।’ কথাগুলো যখন তিনি বলছিলেন, তখন তাঁর চোখ ছলছল করছিল।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শহিদ ভগৎ সিংহ সেবা দলের প্রধান জিতেন্দ্র সিংহ শান্টি বলেন, ‘দিল্লিতে এমন দৃশ্য দেখতে হবে, কেউ ভাবেনি। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে, কারও বয়স ৫, কারও ১৫, কারও ২৫। তাদের দাহ করতে হচ্ছে। সদ্যবিবাহিত অনেকের দেহও শ্মশানে আসছে। চোখে দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি জানিয়েছেন, সীমাপুরীর পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৬০টি দেহ দাহ করা হয়েছে। জায়গা না পেয়ে পড়েছিল আরও ১৫টি দেহ। কিন্তু গত বছর পরিস্থিতি এতটা ভয়ংকর ছিল না।

জিতেন্দ্র জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার একটি শ্মশানে ৭৮টি দেহ দাহ করা হয়েছে। জিতেন্দ্রর মা নিজে একজন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী। ১০ দিন আগে কোভিডে সংক্রমিত হন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো হাসপাতালে জায়গা হয়নি বলে জানিয়েছেন জিতেন্দ্র। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, শুধু শ্মশানই নয়, রাজধানী দিল্লির কবরস্থানগুলোর অবস্থাও একই।

এর আগে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের জেলাগুলোতে শ্মশানের বাইরে মরদেহ নিয়ে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ খুবই তীব্র। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুতে রেকর্ড হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে; মারা গেছেন ২ হাজার ২৬৩ জন। এক দিনে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি। গতকাল শুক্রবার ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে সংক্রমণের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। ভারতে টানা দ্বিতীয় দিন সংক্রমণ তিন লাখের ওপর শনাক্ত হলো। মহারাষ্ট্র রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। বৃহস্পতিবার রাজ্যটিতে মোট ৬৭ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মোট শনাক্ত হলো ৪০ লাখ ৯৪ হাজারের বেশি। কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে সংক্রমণ বেশি। কেন্দ্রীয় অঞ্চল দিল্লির অবস্থাও নাজুক। বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে ২৬ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। মারা গেছেন ৩০৬ জন।

হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন–সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ করোনা রোগী মারা গেছেন। অক্সিজেন সরবরাহ কম থাকায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মুম্বাইয়ে একটি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন ১৩ করোনা রোগী। অক্সিজেন–সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে জার্মানি থেকে অক্সিজেন তৈরির ২৩টি প্ল্যান্ট আনছে কেন্দ্রীয় সরকার। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে গতকাল ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করেছেন মোদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর..

ফেসবুকে আমরা

Facebook Pagelike Widget