-
- Slider, অপরাধ, বরিশাল বিভাগ
- বাউফলে ভোটে জিতে চেয়ারম্যানের বাল্যবিবাহ
- আপডেটের সময় : জুন, ২৬, ২০২১, ১০:৩৯ অপরাহ্ণ
- 199
দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই দ্বিতীয় বিয়ে করে আলোচনায় এসেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার। ৬০ বছর বয়সী এই জনপ্রতিনিধি বিয়ে করেছেন অপ্রাপ্তবয়স্ক এক মেয়েকে, যা আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্কুলছাত্রীর সঙ্গে স্থানীয় এক ইমামের প্রেমের সম্পর্কের নিষ্পত্তি করতে ডেকে গত শুক্রবার ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন চেয়ারম্যান।
এ ঘটনায় হতাশ হয়ে সেই ইমাম বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
এই বিয়েতে মেয়ের বয়স নিয়েও জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেয়ের বয়স ১৮ বছর বলে সনদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে যে স্কুলে পড়ত, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কথা শুনে অবাক হয়েছেন।
চেয়ারম্যান শাহীন আগে থেকে বিবাহিত। তার প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেয়া হয়নি। আর এই বিয়ের পর তিনি রাগে বাবার বাড়ি চলে গেছেন।
শাহীন দুই সন্তানের জনক। ছেলেকে এরই মধ্যে বিয়ে দিয়েছেন আর মেয়ের বয়স তার নববিবাহিতা স্ত্রীর সমান।
কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা গ্রামের এক যুবক ও স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি পরিবার। এর মধ্যে দুজন তিন দিন আগে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
পরে মেয়েটির বাবা দুজনকে পাশের বাড়ির এক আত্মীয়র কাছ থেকে ধরে নিয়ে আসেন এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে জানান।
চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার শুক্রবার ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে ছেলে ও মেয়ের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে মেয়েটিকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের। তিনি মেয়েটির বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি হলে জুমার নামাজের পর চেয়ারম্যানের আয়লা বাজারের বাসায় কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয়।
প্রেমিকা হারিয়ে ইমামের বিষপানঃ
এ ঘটনা সহ্য করতে পারেননি মেয়েটির প্রেমিক সেই যুবক। প্রেমিকা হারানোর কষ্টে তিনি বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
তিনি জাকেয়াবাদ দাখিল মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি মসজিদের পেশ ইমাম হিসেবে কর্মরত।
সেই ইমামের ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার। তিনি বলেন, ‘সে কেবল বলছে, আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না। ওরে আমার ধারে আইন্যা দেন।’
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান সালিসের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিকভাবেও জানছে। নির্বাচনের জন্য আমি বিয়া করতে পারি নাই। এই ফাঁকে ছেলেটা তারে নিয়া পলাইয়া গ্যাছে। কালকে বাবা-মা নিয়া আসছে। তারপর তার বাবা সম্মতি দিছে। আমার মা সম্মতি দিছে। বিয়া করছি।’
শাহীন বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের হয়ে। গত ২১ জুন হয় ভোট। আর ভোটে জয়ের পরেই তিনি করেন বিয়ে।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘গত ২১ তারিখ রাতেই আমাদের পাঁচ লাখ টাকায় কাবিন হয়। পরে শুক্রবার বাদ জুমা কলেমা ও মোনাজাত হয় এবং পরে তাকে আমার ঘরে নিয়া আসি।’
কনকদিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি মুছা মাওলানার ছেলে বিয়ে পড়িয়েছেন জানিয়ে তার নাম বলতে পারেননি চেয়ারম্যান। বলেন ‘এই মুহূর্তে স্মরণ নাই।’
অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি দাবি করেন, মেয়েটি তিন বছর আগে নবম শ্রেণিতে পড়ত। বর্তমানে লেখাপড়া করে না। জন্মসনদ অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৩ ইং।
তবে মেয়েটি যে স্কুলে পড়ত, সেই কনকদিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র জানান, মেয়েটি অষ্টম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী।
তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের সঙ্গে তার বিয়ের ঘটনা কিছুক্ষণ আগে লোকমুখে শুনে অবাক হয়েছি।’
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘লোকমুখে ঘটনা শুনেছি। তবে মেয়ের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। যদি বাল্যবিবাহের অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘মেয়ের বয়স যাচাই-বাছাই শুরু করছি। তার জন্মসনদ এবং স্কুলের সার্টিফিকেট সবকিছু আমরা সংগ্রহ করছি।’
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বয়সের ভুয়া সনদ
চেয়ারম্যান জানান, তার নিকটাত্মীয় হাফেজ আবু সাদেক বিয়ের সময় দোয়া ও মিলাদ পড়িয়েছেন।
সাদেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাবিন ও বিয়ে শুক্রবারই করানো হয়েছে।’
মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এটা তো বাল্যবিবাহ- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ দাখিল করা হয়েছে। তাতে তার বয়স ১৮ লেখা আছে। সেটা দেখেই তিনি কাবিন করিয়েছেন।
‘তা ছাড়া সেখানে মেয়ে ও মেয়ের বাবা-চাচাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকায় আমরা আর কিছু যাচাই করিনি’- বলেন বিয়ে পড়ানো আবু সাদেক।
চেয়ারম্যান যে বলছেন গত ২১ তারিখ কাবিন হয়েছে? এমন প্রশ্নে সাদেক বলেন, ‘সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমি শুক্রবার তাদের পাঁচ লাখে কাবিন করিয়েছি। আমার কাছে কাগজসহ প্রমাণ আছে। সেখানে মেয়ের বাবা, চাচা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।’
মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী নানা শর্তে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করা যায়। তবে এ জন্য আগের স্ত্রীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হয়।
কিন্তু শাহীন হাওলাদার তা করেননি। ঘরে সতিন দেখে তিনি বাড়ি ছেড়ে যান।
দুই সন্তানের জনক চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের বড় ছেলে বিয়ে করেছেন এই আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সহিদুল আলম তালুকদারের শ্যালিকাকে।
এই বিভাগের আরও খবর..
Leave a Reply