বাংলাদেশের অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম ফসল হচ্ছে পাট। যা চৈত্র-বৈশাখ থেকে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে চাষ হয়ে থাকে। বৃষ্টি নির্ভর ফসল পাট। বায়ুর আদ্রতা ৬০% থেকে ৯০% এর পছন্দ। পাট চাষে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। সোনালি আঁশখ্যাত পাটের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলেছে। পাটের সোনালি অতীত এখন কেবলই ইতিহাস। এরপরও পুরোনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন পাট চাষিরা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি আয়ের এই খাত এখন পাট সংকটে ধুঁকছে। গত বছর বাড়তি দামের কারণে লাভ বেশি হওয়ার পর পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। আর এর পেছনে অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পাট পচানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি।
গত বছর দুই দুই বার বন্যা হওয়াতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় পাটের আশ ভালোভাবে পচানো সম্ভব হইয়েছিলো। তাই পাটের দামও ভালো পেয়েছেন পাট চাষীরা। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিচর্যার কাজ করে থাকেন একবুক স্বপ্ন নিয়ে।
উপজেলার ৭নং সহদেবপুর ইউনিয়নের বানিয়াফৈর খাল পাড় গ্রামের ফজলু মিয়া জানান, আমি এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে তোষা পাট চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। কিন্ত গত বছর দুই বার বন্যা হওয়াতে পানি ভালোভাবে পাইছিলাম। চলতি বছর আমাদের উচু এলাকায় এখনো পানি আসে নাই। কিভাবে পাট পচাবো তা নিয়া দুশ্চিন্তায় আছি।
উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমি ৩০ শতাংশ জমিতে তোষা পাট লাগিয়ে ছিলাম। পাট কেটে পানিতে পচিয়ে এখন আবার পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করেছি। কিন্ত এবছর পাটের দাম কেমন হবে তা নিয়ে ভাবছি।
একই এলাকার সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেন জানান, আমি ৯০ শতাংশ জমিতে দেশি পাট চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের চাইতে এবছর ভালো ফলন হয়েছে। পাটের দাম যদি ভালো হয়, তাহলে লাভবান হব। গত দুই বছর ধরে বাজারে কাঁচা পাটের দাম বেশ ভালো যাচ্ছে। পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।
উপজেলার সহদেপুর ইউনিয়নের পৌজান গ্রামের কুমুর উদ্দিনের ছেলে পাট চাষী শহীদ জানান, আমি আজকে পৌজান হাটে ১মন পাট নিয়ে এসেছিলাম। ৩ হাজার ২শত টাকায় বিক্রি করে খুবি ভালো লাগছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে নারান্দিয়া ইউনিয়নে পাট চাষ ১ম স্থান, এলেঙ্গা পৌরসভা ২য় স্থান এবং বাংড়া ইউনিয়ন ৩য় স্থানে রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবছর কালিহাতীতে ৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষাবাদ বেশি হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলাতে পাট চাষ বৃদ্ধি পেয়ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৩০শ হেক্টর ।
পাট চাষী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি। যা আমাদের টাঙ্গাইলে কোনো অভাব নেই। এছাড়া কয়েক বছর যাবত পাটের দামও স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে। ফলে কৃষকদের লোকসানের কবলে পড়তে হয় না। তাই কৃষকরা বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর পরই জমিতে লাগায় সরিষা। সরিষা উঠানোর পরেই ধানের চাষ করেন। ধান কেটেই পাট চাষে আগ্রহ বাড়ে। তিন ফসল ফলানোর দিকে মনোযোগী হচ্ছেন কৃষকরা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৬ শত টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মোঃ আল-আমিন শেখ
টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি
Leave a Reply