আজ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে চীনের উইঘুর মুসলিম বন্দিদের কিডনি!

সুস্থ লিভারের দাম পড়বে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার ডলার। মোটামুটি ভালোমানের কিডনি অবশ্য আরও কিছুটা কমেই পাওয়া যাবে কালোবাজারে। অস্ট্রেলিয়ার হেরাল্ড সান ট্যাবলয়েড-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক কালোবাজারে বিক্রি হওয়া ওই সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বড় অংশই চীনের বন্দিশিবিরে আটক উইঘুর মুসলিমদের।
জিনজিয়াং প্রদেশের বাসিন্দা উইঘুর মুসলিমদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী তিব্বতি এবং ফালুন গং গোষ্ঠীর বন্দিদের থেকেও জোর করে অঙ্গ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, চীনের কমিউনিস্ট সরকার বেআইনিভাবে বছরে অন্তত ১০০ কোটি ডলারের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবসা চালাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই) বলছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার উইঘুরকে জিনজিয়াং থেকে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের কারখানায় পাচার করা হয়েছে। এই উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত এবং তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহ করছে চীন। ২০১৯ সালে চীনের একটি আদালতে দেশটিতে প্রায় ৬০ হাজার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে এই সংখ্যা দাতাদের তুলনায় অনেক বেশি। চীনের যেসব হাসপাতালে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়, সেসবের বেশিরভাগেরই অবস্থান উইঘুর বন্দিশিবিরের আশপাশের এলাকায়।

এবছরের জুনে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন (ইউএনএইচআরসি) বলেছিলো, উইঘুরসহ সংখ্যালঘুদের ‘অঙ্গ সংগ্রহের’ কথিত প্রতিবেদনে তাদের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’।

চলতি বছরের শুরুর দিকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা চীন সরকারের বিরুদ্ধে উইঘুর, তিব্বতি এবং ফালুন গং বন্দিদের অঙ্গ কেটে বিক্রির অভিযোগ তুলেছিলো।

চীনের বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আনুমানিক ২০ লাখ তুর্কিভাষী উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের। যৌনাঙ্গে ইলেকট্রিক শক, নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ-সহ বন্দিদের উপর নানা অত্যাচার এবং নারী বন্দিদের ধর্ষণ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চল্লিশের দশকে স্বাধীন রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে জিনজিয়াং প্রদেশ নামকরণ করেছিলো চীন। তারপর থেকেই সেখানকার বাসিন্দা উইঘুর মুসলিমদের একাংশ চীনা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লড়াই শুরু করেন।

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জিনজিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের প্রতি দেশটির সরকারের দমন-পীড়ন ও জাতিগত নিধন অভিযান নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি শিবিরে আটকে রেখে বর্বর নির্যাতন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে বিক্রি এবং নারী-পুরুষদের সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী ও মানবাধিকার সংস্থা এসব কারণে চীনের নিন্দা জানিয়েছে। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে উইঘুর জনগোষ্ঠীকে তাদের ঐতিহাসিক পৈতৃক জন্মভূমি জিনজিয়াং থেকে নির্মূলের অভিযোগও রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিদেশি গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে চীনের বন্দি শিবিরে উইঘুরদের উপর ‘ব্যাপক সন্ত্রাস ও নির্যাতনের’ চিত্র উঠে এসেছে। জিনজিয়াংজুড়ে বিস্তৃত এসব শিবিরের শত শত বন্দিকে প্রায়ই মারধর এবং অন্যান্য সহিংস জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল ব্যবহার করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।

উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীন যে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সেটিকে বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী ও দেশ পরিষ্কার গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর..

ফেসবুকে আমরা

Facebook Pagelike Widget