প্রথম খুন করে নির্বিঘ্নে পার করছিল তিন খুনি। বন্ধুদের নিয়ে ফুর্তি ও আড্ডার মশগুল ছিল তারা। কিন্তু বখাটে বন্ধুদের পকেটে টান করার পর বের হয় রাস্তায়। উদ্দেশ্য ছিনতাই। কিন্তু বিধি বাম। তারা হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার শাহীনশাহ টাওয়ারের সামনে। সেখানেই পেয়ে যায় এক পথচারীকে। ওই পথচারীর কাছ থেকে মোবাইল টেনে নেওয়ার চেষ্টার সময়ই ধরা পড়ে ছিনতাইকারী। অদূরবর্তী স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তিই যে তাদের ধরবে সেটা বুঝতেই পারেনি ছিনতাইকারীরা। পরে দেখা গেল তাঁরা পুলিশ।
প্রথম খুনের স্থানে দ্বিতীয় খুন করতে গিয়ে ধরা পড়া আসামিরা এখন শ্রী ঘরে। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে আসামিরা খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। কারাগারে যাওয়া আসামিরা হল কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের হামিদুল হক মুহুরী পাড়ার আবুল কালামের ছেলে মো. ইয়াছিন (২০), বন্দর থানার ফেলাগাজী বাড়ির মো. বেলালের ছেলে মো. হৃদয় (২৬) ও একই থানার ফ্রিপোর্ট এলাকার ওয়াশীল চৌধুরী পাড়ার সাহাব উদ্দিনের ছেলে সজীব (৩২)।
ঘটনার বিষয়ে ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর নুরুল হুদা কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১ মে রাতে শাহীনশাহ টাওয়ারের পাশের একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে মাহফুজুর রহমান নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গলাফ ফাঁস লাগানো মরদেহ উদ্ধারের পর বোঝা গিয়েছিল সেটি হত্যাকণ্ড। এই ঘটনায় নিহতের বাবা আবদুর রহমান বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ক্লু-লেস হত্যা মামলা হিসেবে এটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রযুক্তিগত কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে কৌশলে পুলিশ ওৎ পেতে থাকা শুরু করে। এরই মধ্যে ১৫ মে রাতে মাহফুজ হত্যাকাণ্ডে ঘটনাস্থলে এক পথচারীর মোবাইল টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছিল ছিনতাইকারীরা। তখন সেখানে কৌশলে পুলিশের অবস্থান ছিল। ছিনতাইয়ের সময়ই একজন ছিনতাইকারী অন্যজন ছিনতাইকারীর উদ্দেশ্যে বলছিল, এখানে কদিন আগে একজনে খুন করেছি, আর খুন করব না।
ছিনতাইকারীদের একজনের এমন কথা শুনতে পান কৌশলে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্য। পরক্ষণেই ছিনতাইকারীদের একজনকে ঝাপ্টে ধরে পুলিশ। এরপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেষে ১৮ মে তারা মহানগর মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, মাহফুজ ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করতেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে মাহফুজের সঙ্গে হৃদয়ের বাক-বিতণ্ডা হয়। সেই কারণে প্রতিশোধ নিতেই বখাটে বন্ধু ইয়াছিন ও সজীবকে বিষয়টি জানায়। এরপর তারা খুনের পরিকল্পনা করে। ১ মে রাতে সজীব নিজের বাসা থেকে রশি ও স্কচটেপ আনে। তারপর তিনজন গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা মাহফুজকে পিটিয়ে এবং মুছে গামছা গুজে দিয়ে স্কচটেপ লাগিয়ে হত্যা করে। এরপর মরদেহ সিঁড়ির সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
Leave a Reply