আজ ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ভারতের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন

ভারত ও চীনের সীমান্ত অঞ্চল লাদাখ নিয়ে দুদেশের উত্তেজনার মাঝে সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

অপরদিকে, চীন লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) ওপারে সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন বাড়ালে ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা মোতায়েন বাড়াবে। মঙ্গলবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সাথে সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের যে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ নিয়ে চীনা সেনাবাহিনী আপত্তি তুলেছে, তা-ও চালিয়ে যাওয়া হবে। এ খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

খবরে প্রকাশ, নয়াদিল্লিতে যখন এই তৎপরতা, তখনই চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সে দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে চীনা সেনার প্রশিক্ষণ বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত ও তিন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন। তার আগে মোদি ও রাজনাথ সামরিক বাহিনীর কর্তাদের সাথে আলোচনা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথেও প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজমুকুন্দ নরবণেও বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন।

ভারত-চীন সীমান্তের তিনটি সেক্টরই এখন উত্তপ্ত। গত ৫ মে থেকেই পশ্চিম ভাগে বা ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘাত চলছে। ‘ফিঙ্গার থ্রি’ ও ‘ফিঙ্গার ফোর’-এর মধ্যে রাস্তা তৈরির কাজে চীন প্রথম আপত্তি তোলে। একই সাথে গালওয়ান ভ্যালির সাথে সংযোগকারী রাস্তার কাজেও চিনের আপত্তি। ৫ মে রাতে পূর্ব লাদাখের প্যাঙ্গং লেকের কাছে চিন ভারতীয় সেনার নজরদারি বাহিনীকে বাধা দেয়। তার পর থেকেই ওই দু’টি এলাকায় দু’দেশের সেনা পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পূর্ব ভাগে বা ইস্টার্ন সেক্টরের উত্তর সিকিমেও এ মাসের শুরুতে দুই সেনাবাহিনীর সংঘাত বেঁধেছে। সাধারণত সেন্ট্রাল সেক্টরের উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশের অংশ শান্ত থাকে। কিন্তু সেখানেও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।

রাজনাথের সাথে সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে এই পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়। বিপিন রাওয়াত ও তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। আলোচনা চলে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। ভারতের সেনাবাহিনী কী ভাবে চীনের সেনাবাহিনীর রণমূর্তি সামাল দিচ্ছে, তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এই বিবাদের মীমাংসা একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। কূটনৈতিক স্তরেই এর সমাধান সম্ভব। কিন্তু যত দিন তা না-হচ্ছে, তত দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজের অবস্থান থেকে নড়বে না। চীন যদি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে আরো বেশি সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করে, ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা-যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করবে।

সেনা সূত্রের খবর, উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে চীন প্রায় হাজার দশেক সেনা মোতায়েন করেছে। তিব্বতের গারি গুনশা ঘাঁটিতে চলছে নির্মাণকাজ। সেখানে হাজির বেশ কিছু যুদ্ধবিমানও। গতকাল ভারত থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে চীন।

এরই মধ্যে চীনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত করে তুলেছে। মঙ্গলবার জিনপিং বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সে জন্য সামগ্রিক প্রশিক্ষণ জরুরি।’ চীনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশের কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন জিনপিং।

তবে ভারতের সাথে সীমান্ত সংঘাতের বাতাবরণে জিনপিংয়ের বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর..

ফেসবুকে আমরা

Facebook Pagelike Widget