আজ ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

দুর্বল হয়ে আসছে করোনাভাইরাস

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শক্তি হারাচ্ছে। ভাইরাসটি আগের তুলনায় এখন অনেক কম মারাত্মক এবং মানুষ সহজেই এটাতে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা।

পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টারের জরুরি ওষুধ বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. ডোনাল্ড ইয়েলি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, লোকেরা সহজেই ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েছে বলে মনে হয় এবং এ বছরের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মহামারিটি ধরা পড়ার সময়ে এর যে ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিল সেটা এখন অনেকটাই কম বলে মনে হয়।

ইয়েলি বলেছিলেন, ভাইরাসটির কিছু পরিবর্তন হতে পারে। কিছু নিদর্শন বলছে যে ভাইরাসটির শক্তি কমছে।

তিনি বলেন, পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টার মার্চের পর থেকে সাফল্যের সাথে পাঁচ শতাধিক করোনভাইরাস রোগীকে চিকিৎসা করেছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খুব কম রোগীদের তাদের শ্বাস নিতে সহায়তা করার জন্য ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হচ্ছে। যেটা আগে অনেক বেশি ছিল।

কয়েকদিন আগে ইতালির গবেষকরাও একই কথা বলেছিলেন। দেশটির স্যান রাফায়েলে হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ও গবেষক এলবার্তো জ্যানগ্রিলো বলেন, ‘ভাইরাসটি আগের তুলনায় এখন অনেক কম মারাত্মক বলে মনে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, সত্যি বলতে কী, ইতালিতে এখন এই ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব নেই। এক মাস আগেও যাদের করোনা শনাক্তকরণ টেস্ট করা হয়েছে তাদের থেকে গত ১০ দিনে টেস্ট করাতে আসা মানুষদের অনেককে সুস্থই দেখা গেছে। কারণ তাদের মধ্যে খুব সামান্য সমস্যাই বিদ্যমান ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসটির তাণ্ডব শুরু হওয়ার আগে ইতালিতেই সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ। ইতালিতে মার্চ-এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেয়া লকডাউনও শিথিল হতে শুরু করেছে সেখানে।

ইতালির গবেষকরা বলছেন, মার্চ ও এপ্রিলে সঙ্কটের চূড়ান্ত সময়ে নেওয়া নমুনাগুলোর তুলনায় সেখানে বর্তমানে যেসব রোগীরা নমুনা দিচ্ছেন তাদের শরীরে খুব কম পরিমাণে ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এবং একাধিক বিজ্ঞানী সোমবার জ্যানগ্রিলো দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন। বলছেন, করোনার শক্তি কমে যাওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।

এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটির সংক্রমণ হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর গতি প্রকৃতির পরিবর্তন এবং নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তবে নতুন এই করোনাভাইরাসের শক্তি কমে যাচ্ছে বলে যে প্রচারণা চলছে, তা ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ফন কেরকোভে বলেছেন, সংক্রমণের সক্ষমতার দিক থেকে করোনাভাইরাসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শক্তি বা তীব্রতার দিক থেকেও করোনা পিছিয়ে পড়েনি।

ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো সেন্টার ফর ভাইরাস রিসার্চের অস্কার ম্যাকলিয়ান বলেছিলেন যে, ভাইরাসগুলো দুর্বল হচ্ছে এমন দাবীর স্বপক্ষে কোন জোরালো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই এবং জেনেটিক কারণেই এটি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না।

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য অধ্যাপক লিয়ানা ওয়েন বলেছেন, ‘ইতালিয়ান চিকিৎসকদের পরামর্শটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক, কারণ এটির কোনো প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়নি। করোনাভাইরাসের দুর্বল হয়ে পড়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এটি এখনো একটি অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য এবং অত্যন্ত সংক্রামক রোগ। আমাদের আগের মতোই সতর্ক থাকা দরকার।’

সূত্র- ডেইলি মেইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর..

ফেসবুকে আমরা

Facebook Pagelike Widget