মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ময়মনসিংহ।
ময়মনসিংহের ত্রিশালের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামানসহ ৮ কর্মকর্তাকে বদলি করে গত ২২ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারী করে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়। প্রজ্ঞাপনের অধিকাংশ আদেশ বাস্তবায়িত হলেও অদৃশ্য কারনে প্রায় দুই মাসেও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বদলির আদেশটি বাস্তবায়ন করছে না জেলা প্রশাসন।
এবিষয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য পাওয়া গেছে, জেলা প্রশাসন বলছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় বাস্তবায়ন করবে আর জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় বলছে এ আদেশ জেলা প্রশাসন বাস্তবায়ন করবে। ইউএনও’র বদলির আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় একদিকে উপজেলার প্রশাসনিক নানা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে অপরদিকে জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানাযায়, ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন আক্তারুজ্জামান। এর আগে তিনি র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরই মধ্যে অফিসের ফাইল নিয়ে ঢিলেমিসি, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে অসদাচরন, নজরুল কলেজ মার্কেটের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে ব্যবসায়িদের হয়রানি,বিআরডিবির অনুমতি না নিয়ে তাদের জমি দখল করে কিন্ডারগার্ডেন স্কুল নির্মান সহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
গত ২২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের উপসচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি স্বাক্ষরিত এক আদেশে ইউএনও মো. আক্তারুজ্জামানকে রংপুর বিভাগে বদলির আদেশ জারি হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইলোভেশন ইউনিটের উপ-পরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাজী মো. মোহসীন উজ্জল ও নেত্রকোনা জেলা পরিষদের সচিব (সিনিয়র সহকারী সচিব) আসাদুজ্জামানকে ময়মনসিংহ বিভাগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের অধিনে ন্যস্ত করা হয়েছে।
জনস্বার্থে জারিকৃত ওই আদেশ অবিলম্বে কার্যকরের জন্য মন্ত্রনালয় নির্দেশ প্রদান করলেও দেড় মাসেরও বেশি সময়ে বাস্তবায়ন হয়নি ত্রিশালের ইউএনও’র বদলির সেই আদেশ। স্থগিতও হয়নি ওই আদেশ। এদিকে উপজেলা পরিষদের নানা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্তবিরতা। উপজেলা পরিষদ সুত্রে জানাযায় ২০২২/২৩ অর্থ বছরের এডিপি বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। চলতি অর্থ বছরের আর তিন মাস বাকী থাকলেও এখনো এডিপির ১০ ভাগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।
প্রবীন আ’লীগ নেতা ফজলে রাব্বী বলেন, বদলির আদেশ যেহেতু স্থগিত হয়নি তার মানে তা বহাল আছে। আমার জানা তথ্যমতে কাজী মো. মোহসীন উজ্জল ও আসাদুজ্জামানসহ তিনজনকে ময়মনসিংহ বিভাগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের অধিনে ন্যস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়।
মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছ জানান, আমার ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পে নিন্মমানের কাজের অভিযোগ দেখে আমিসহ আমার আমার পরিষদে সদস্যরা প্রতিবাদ করলে আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করে। তাছাড়া প্রতিবছর আমরা এডিপির মাধ্যমে গ্রামীন অবকাঠামোর উন্নয়ন করে থাকি। এবার তার সেচ্ছাচারিতার কারনে অর্থবছরের আর তিনমাস বাকী থাকলেও এডিবির কোন কাজ আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার বলেন, দুমাস আগে তার বদলির আদেশ হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সাথে ইউএনওর সমন্বয়হীনতা থাকার কারনে কাজের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
বদলীর আদেশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় আদেশটি জারি করেছেন। বিষয়টি উনারাই দেখবেন। উর্ধ্বতন স্যারদের সিদ্ধান্তের ওপর আমার কিছু বলার নেই। মন্ত্রনালয়ের আদেশ জেলা প্রশাসন বাস্তবায়ন করবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার মো. শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, যেহেতু বদলির আদেশ হয়েছে, সময় সাপেক্ষ চলে যাবেন। প্রজ্ঞাপনের দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বলতে পারবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় থেকে পদায়নের যে নির্দেশনাগুলো দেয়া হয় সেগুলো বাস্তবায়ন করবে যার অধীনে থাকে তিনি। ইউএনওদের ক্ষেত্রে মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলাপ্রশাসক তাদের রিলিজ দিবেন।
Leave a Reply